Noorer Barta Logo
উহুদের যুদ্ধউহুদের যুদ্ধ

ইসলামের নির্মম এবং সাহাবিদের রক্ত মাখা এই যুদ্ধের নাম উহুদের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ২৩শে মার্চ ৬২৫খ্রিষ্টাব্দ (৩ই হিজরি) মুসলিম ও কুরাইশ কাফেরদের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ সংগঠিত হয়।

উহুদ যুদ্ধের কারণ

বদরের যুদ্ধের পরাজয় মক্কার কুরাইশ কাফেররা মানতে পারছিলনা। বদরের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে কুরাইশরা আর্থিক, সামরিক রাজনৈতিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় বীর আবু জাহেল উতবা প্রাণ হারিয়েছিল। বদরের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ান প্রতিজ্ঞা করে যে, প্রতিশোধ গ্রহণ না করা পর্যন্ত সে নারী অথবা তৈল স্পর্শ করবে না। সময় মদিনার ইহুদিরা কুরাইশদেরকে কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করে। মদিনার প্রাধান্য এবং ইসলামের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক অর্থনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধিতে কুরাইশগণ আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক কর্তৃত্ব হারানোর আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়ে। উপরন্ত হাশেমী গোত্রের হযরত মুহাম্মদ (.) এর একচ্ছত্র আধিপত্য লাভ এবং তার নেতৃত্ব মদিনার কমোন্নতি গোত্রীয় স্বার্থের পরিপন্থী হলে উমাইয়া নেতা আবু সুফিয়ানের গাত্রদাহ দেখা দেয়। বস্তুত কুরাইশ গোত্রের হাশেমী উমাইয়া শাখা দুটির পুরনো দ্বন্ধ নতুন মাত্রা লাভ করলে যুদ্ধ অবধারিত হয়ে পড়ে।

উহুদ যুদ্ধের ঘটনা:

আবু সুফিয়ান ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে ৩০০ উষ্ট্ররোহী ২০০ অশ্বারোহীসহ ৩০০০ সশস্ত্র সৈন্য নিয়ে মদিনার পাঁচ মাইল পশ্চিমে উহুদ উপত্যকায় সমবেত হলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও হযরত মুহাম্মদ (.) ১০০ জন বর্মধারী, ৫০ জন তীরন্দাজসহ মাত্র ১০০০ জন মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পথিমধ্যে মোনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ বিন উবাই তার ৩০০ জন অনুচরসহ দলত্যাগ করলে শেষ পর্যন্ত মাত্র ৭০০ জন মুসলিম যোদ্ধা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মহানবি উহুদ পাহাড়ের গোলাকার অংশের বাইরে থেকে যুদ্ধ চালাবার মনস্থির করেন এবং সেভাবে সৈন্য সমাবেশ করেন। মুসলিম শিবিরের পশ্চাতে বাম পাশে একটি গিরিপথ ছিল পেছন দিক থেকে যাতে শত্রুরা অর্তকিত আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের নেতৃত্বে ৫০ জন তীরন্দাজকে গুরুত্বপূর্ণ গিরিপথটির প্রহরায় নিযুক্ত করেন এবং মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সুস্পষ্ট নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এই স্থান ত্যাগ করতে নিষেধ করেন। উহুদের যুদ্ধ

প্রথমদিকে মুসলমানরা পর পর সাফল্য লাভ করে। শত্রুবাহিনী দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন শুরু করেন। যুদ্ধের প্রাথমিক সাফল্যের উল্লাসে মুসলিম সৈন্যবাহিনী শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলে এবং গিরিপথের রক্ষণাবেক্ষণের পরিবর্তে গনিমাতের মাল সংগ্রহে নিয়োজিত হয়। মুসলিম বাহিনীর এই বিশৃঙ্খলার সুযোগে দুর্ধর্ষ সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ পেছন থেকে অতর্কিত আক্রমণ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং দ্রুত পলায়নে বাধ্য করে। স্বয়ং মহানবি (.) কুরাইশ গোত্রের ইবন কামিয়ার নিক্ষিপ্ত প্রস্তরাঘাতে আহত হয়ে সংজ্ঞা দুটি দাত হারান। এই যুদ্ধে বীরকেশরী হযরত আমীর হামজা (রা.) সহ ৭০ জন মুসলিম যোদ্ধা শহীদ হন। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা হামজা (রা.) এর হৃৎপিন্ড চর্বণ করে নিষ্ঠরতার পরিচয় দেয়। অনেক সাহাবি উহুদের যুদ্ধে আহত হন। এই যুদ্ধে মুসলিমরা পরাজিত হন এবং কাফিররা জয়ী হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *