Noorer Barta Logo
যুদ্ধ

মহানবীর হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নেতৃত্বে মুসলিমরা মক্কার কুরাইশদের বিরুদ্ধে খন্দকের যুদ্ধ করেছিল। ৬২৭ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ আবু সুফিয়ান কুরাইশ, ইহুদি বেদুইনদের একটি সম্মিলিত বাহিনীর নেতৃত্ব মোট ১০০০০ সৈন্যসহ মদিনার দিকে অগ্রসর হয়। মহানবি (সা.) ৩০০০ সৈন্য সংগ্রহ করে এই সম্মিলিত বাহিনীকে প্রতিরোধ করার উপায় উদ্ভাবনের লক্ষ্যে পরামর্শ সভা আহবান করেন। সভায় পারস্যবাসি হযরত সালমান ফারসি (রা)-এর পরামর্শ গৃহীত হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, শহরের তিন দিকে অরক্ষিত স্থানে পরিখা খনন করা হয়। পরিখা অথবা খন্দক হতেই যুদ্ধের নামকরণ হয়েছেখন্দকের যুদ্ধ ইংরেজি ভাষায় যুদ্ধকে “Battle of the Confederates বা সম্মিলিত শক্তিসমূহের যুদ্ধ বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এটাআহযাবের যুদ্ধনামে অভিহিত হয়েছে।

আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থায় শিশু নারীদের নিরাপদ দুর্গ গম্বুজে আশ্রয় প্রদান করা হয়। উদ্ভাবনী শক্তির প্রতীক আত্মরক্ষার বলিষ্ঠ উপায় পরিখা কুরাইশদের আক্রমণকে প্রতিহত করে। আত্মরক্ষার অভিনব কৌশল দেখে বিধর্মী কুরাইশরা বিস্মিত হল। আপ্রাণ চেষ্টা করেও তারা মদিনায় প্রবেশ করতে সমর্থ হল না। তিন সপ্তাহের অধিককাল মদিনা অবরোধ করে অবশেষে তারা রণে ভঙ্গ দেয়। বেদুইন, কুরাইশ ইহুদিদের দ্বারা গঠিত ত্রিশক্তির মধ্যে ঐক্যের অভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মহানবি () এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, রণকৌশল, মুসলিম গোয়েন্দা বাহিনীর কর্তব্যনিষ্ঠা এবং মুসলিম বাহিনীর অসাধারণ ঐক্য শৃঙ্খলাবোধ শত্রুপক্ষের পরাজয়ের পেছনে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল। এই যুদ্ধে মুসলিমরা বিজয় লাভ করে আর কাফেররা পরাজিত হয়।

যুদ্ধের কারণ

কুরাইশদের আশঙ্কা : কুরাইশরা উহুদ যুদ্ধে সাময়িক জয়লাভ করলেও এতে তাদের আশানুরূপ সাফল্য অর্জিত হয়নি তারা মক্কার সাথে মদিনাকে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য এবং তাদের বাণিজ্য পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কোন সেনাবাহিনী মদিনায় রেখে যায়নি। ফলে কুরাইশদের যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানগণ নিজেদের সংগঠিত করে পূর্বের তুলনায় অধিকতর শত্তিশালী হয়ে উঠেন। মদিনায় মুসলমানদের এই শত্তি বৃদ্ধিতে মক্কার কুরাইশগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তারা মনে করল যে, মুসলমানদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে তাদের আর্থসামাজিক ধর্মীয় সুযোগসুবিধা চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তারা শেষবারের মতো যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করল।

বেদুইনদের শত্রুতা : মদিনার শহরতলীতে বসবাসকারী বেদুঈনরা লুটতরাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। হযরত মুহাম্মদ সে) তাদের সব কার্যকলাপ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এমনকি কয়েকবার তাদেরকে জন্য শাস্তি প্রদান করেন। সঙ্গতকারণে মুসলমানদের উপর বেদুইনরা অসন্তুষ্ট ছিল৷ প্রতিশোধ গ্রহণের বাসনায় তারাও কুরাইশদের সাথে হাত মিলাল।

ইহুদিদের উসকানি : উহুদ যুদ্ধের পর মদিনা হতে বানু নাজির গোত্রের ইহুদিদের বহিষ্কার করা হয়েছিল তারা খাইবারের ওয়াদি উল কুরা সিরিয়ার বাণিজ্য পথে এবং অন্যান্য জায়গায় বসতি স্থাপন করল। অবিলম্বে এসব ইহুদি স্থানীয় পার্শ্বতী লোকদেরকে মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে লাগল। তাদের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে সব ইকুদি গোত্রই মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল। উপরন্ধ, তারা মক্কার কুরাইশদের মদিনা পুনরাক্রমণের জন্য অনবরত উত্তেজিত করতে থাকে।

খন্দক যুদ্ধের ফলাফল

ইসলামের ইতিহাসে খন্দক যুদ্ধের ফলাফল অত্যন্ত গুরুতৃপূর্ণ

প্রথমত: ত্রিশক্তির পরাজয় : বদরের যুদ্ধের মতো খন্দকের যুদ্ধও ইসলামের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় যুগান্তকারী ঘটনা। বদরের যুদ্ধ অপেক্ষা খন্দকের যুদ্ধের গুরুত্ব কোন অংশে কম নহে। কারণ বদরের প্রান্তরে মক্কার পাপিষ্ঠ কুরাইশদের পরাজিত করে ইসলামকে মদিনায় সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। অপরদিকে খন্দকের যুদ্ধে বেদুইন, ইহুদি বির্ধমী কুরাইশদের সম্মিলিত শক্তিকে ধবংস করা হয়। এস, এম, ইমাম উদ্দিনের মতে, “ সম্মিলিত বাহিনী (আহযাব) ভাঙ্গনের ফলে মক্কাবাসিদের সম্পূর্ণ পরাজয় প্রতিভাত হয়ে ওঠে এবং মদিনায় মুসলিম রাষ্ট্রের ভিত্তিমূল সুদুঢ় করে। অল্প সময়ের মধ্যে ইসলাম সমগ্র আরবে তথা পার্শ্বতী দেশগুলোতে বিস্তৃতি লাভ করে।

দ্বিতীয়ত : শৃঙ্খলা বিশ্বাসের বিজয় : খন্দক যুদ্ধের গুরুত্ব বিচার করে জোসেফ হেল বলেন, “খন্দক যুদ্ধের ফলাফল ছিল সংখ্যাধিক্য শক্তির উপর শৃঙ্খলা একতার নব বিজয়।এর ফলে ইসলামের মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। উহুদের যুদ্ধে যে কারণে মুসলমানগণ পরাজয় বরণ করে এর পুনরাবৃত্তি হলে খন্দকের যুদ্ধে ইসলাম ধ্বংসপ্রাপ্ত হত। আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস, একতা, শৃঙ্খলা আত্মোৎসর্গের পরাকাষ্টা দেখিয়ে হযরত মুহাম্মদ () এর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব মুসলমানগণ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে বিজয় সুনিশ্চিত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *